টানা চার দিন চরম নাটকীয়তার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব বাতিল ও পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। এর ফলে পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাবের মুখে পড়তে যাচ্ছেন ইমরান। ৩ এপ্রিল পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধীরা অনাস্থা প্রস্তাব আনে। তবে সংবিধানের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদের উল্লেখ করে ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি জানিয়ে দেন, বিরোধীদের আনা প্রস্তাব আসলে ‘বিদেশি চক্রান্ত’।

ডেপুটি স্পিকারের এই পদক্ষেপের পরপর ইমরান খানের পরামর্শে প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ভেঙে দেন। ডেপুটি স্পিকারের দেওয়া ওই আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন বিরোধীরা। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধীদের অভিযোগ, তার সরকার আর্থিক অব্যবস্থাপনা ও ভুল বৈদেশিক নীতি অবলম্বন করেছে। তবে ইমরানের দাবি, বিরোধী দলগুলোর নেতাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থানের কারণে এই দলগুলো তার বিরুদ্ধে জোট বেঁধেছে। সাম্প্রতিক রাশিয়া সফরের কারণে ক্ষুব্ধ যুক্তরাষ্ট্র এই বিরোধী দলগুলোকে সরকার পরিবর্তনের জন্য উস্কানি দিচ্ছে। এমনকি দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা তার দল তেহরিক ইনসাফ থেকে বের করে দেওয়া কয়েক জন আইনপ্রণেতাও এই ষড়যন্ত্রে যোগ দিয়েছে।

গত সপ্তাহে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ইমরান অভিযোগ করেছেন, তার নিজের দলের লোকেরাই সম্প্রতি মার্কিন দূতাবাসে ঘন ঘন যাতায়াত করেছে। দলের এই ভিন্ন মতাবলম্বীদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড তাকে বিস্মিত করেছে। গত ৩ এপ্রিল ৩৪২ আসনের পাক ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ১৯৭ জন সদস্য ইমরানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব সমর্থন করেছিলেন। এদের মধ্যে তেহরিক ই ইনসাফ থেকে বের করে দেওয়া আইনপ্রণেতারাও রয়েছেন। ডেপুটি স্পিকার যদি ওই প্রস্তাব বাতিল না করতেন তাহলে সেদিনই ইমরানের বিদায় ঘণ্টা বাজতো।

বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট ডেপুটি স্পিকারের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণার পাশাপাশি ৯ এপ্রিল পুনরায় পার্লামেন্টের অধিবেশন ডাকার নির্দেশ দিয়েছে। ওই অধিবেশনেই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হবে। আগের হিসাব অনুযায়ী, ধরে নেওয়া হচ্ছে ইমরান খান অনাস্থা ভোটে পরাজিত হচ্ছেন। সেই হিসেবে বলা যায়, শেষ পর্যন্ত অসম্মনজনকভাবেই ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে যাচ্ছেন ইমরান খান।